করোনাকালের হোম অফিস
ছবিতে আমার “হোম-অফিস”। ল্যাপটপ, খাতা-কলম, ফোন, কিছু স্টেশনারি আর হার্ড-কপির বইসহ একটা টেবিল আর একটা চেয়ার।
গবেষণা, ডাটা ঘাটাঘাটি, অল্পবিস্তর পড়াশুনা আর প্রয়োজনে অফিসের ভিডিও-অডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়া। এই হল হোম-অফিসের কাজ।
ছাত্রজীবন শেষ করেছি, খুব বেশিদিন হয়নি। তাই এখনো রুমে একটা টেবিল-চেয়ারের সেট আপ আছে৷ অবশ্য আমার ইচ্ছা আছে, জীবনে সবসময়ই বাসায় নিজের জন্য একটা পড়ার জায়গা রাখার। কে জানে সুযোগ হয় কিনা। আমি যেখানে চাকরি করি, সেই অফিসের বিভিন্ন দেশের শাখায় থাকা কলিগরা তাদের হোম-অফিসের ছবি পাঠিয়েছিলেন। সেখানেই দেখলাম, অবস্থাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও অনেক সিনিয়র কলিগের বাসায় নিজের জন্য টেবিল-চেয়ার নেই। নিজের পরিবার থাকলে মনে হয় প্রায়োরিটি বদলে যায়। তাই তারা অনেকে ড্রয়িংরুমে ব্যবস্থা করেছেন। কেউ কেউ আয়রন করার স্ট্যান্ডকে টেবিল বানিয়েছেন। কেউ ডাইনিং টেবিলে বসছেন। কেউ আবার বিছানায় বসেই অফিসের কাজ করছেন।
এই কোয়ারেন্টিনের সময়টা বেশ অদ্ভুত এবং মজার। একেকজনের ছবিগুলোতে দেখতে পারছিলাম, কারো টেবিলের পাশে বা পেছনে থাকা বিছানায় তাদের ছোট বাচ্চারা মারামারি-লাফালাফি করছে। কেউ আবার তাদের পোষা কুকুর বা বেড়াল কে কোলে নিয়ে লিখছেন,পড়ছেন বা অনলাইনে কল রিসিভ করছেন।
বাসায় দীর্ঘদিন অফিস করা সহজ না। বিছানার আশেপাশে থাকলে আলসেমি চলে আসে। অফিসে থাকলে কলিগদের সাথে যখন তখন দরকারে-অদরকারে কমিউনিকেট করা যায়। বাসায় ত সেটা হয়না। বোরডম কাটিয়ে উঠা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবু নাস্তার পরে আমার মায়ের হাতে তৈরি এক কাপ চা অফিস চালিয়ে যেতে ভীষণ সাহায্য করে আমাকে।
সব মিলিয়ে তাই একে সৌভাগ্য-ই বলতে হবে। বাসায় বসে অফিস করার মত একটা চাকরি করছি। অনেকেই তো সেটা পারছে না।
কারও কারও জীবিকাটা ডিসেন্ট হলেও পুরোটাই বাইরের কাজের উপর নির্ভর করে। অন্য কারও জীবন বাঁচাতে বা কারও জীবনকে স্বাভাবিক রাখতে কাজ করতে হচ্ছে কাউকে বাইরে থেকেই। আর দিনমজুর ভাই-বোনেরা কতই না কষ্টে আর দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকে পেটের দায়ে আর ঘরে থাকতেই পারছেন না। এমনকি ঘর থেকে বেরিয়েও তাদের যথেষ্ট আয় হচ্ছে না।
এই দুঃসময়টা শিখিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছুই। দেশের অর্থনীতির পুরো ইকোসিস্টেমে কেউ কম গুরুত্বপূর্ণ না, তার আয় যত কম-ই হোক না কেন। কেউ কেউ না থাকলে জীবন স্বাভাবিক রাখাই কঠিন হয়ে যেত।
সুস্থ থাকুন। যতটা সম্ভব,বাড়িতে থাকুন।