করোনার প্রাদুর্ভাবে জটিলতার মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা

জেলা/শহর পর্যায়ের দরিদ্রদের তালিকা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তালিকা করতে বলেছেন এমন সব নিম্নবিত্ত/নিম্নমধ্যবিত্তদের, যারা হাত পাততে পারছেন না। নির্দেশনা মহৎ। কিন্তু মহৎ হলেই কি সেটা বাস্তবায়নযোগ্য?

গ্রাম পর্যায়ের অভাবী আর শহর পর্যায়ের অভাবী/দরিদ্রদের তালিকা করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। গ্রামে মোটামুটি সবাই স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে এক এলাকায় অনেকদিন থাকেন। তাই তাদের চিহ্নিতকরণ তুলনামূলক সহজ। যারা প্রশাসন বা খাদ্য অধিদপ্তর থেকে শহর পর্যায়ে এই মুহূর্তে ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে চাল-ডাল বিতরণের কাজ করছেন, তারা জানেন শহর পর্যায়ে কাজটা কেমন।

কাওরানবাজারে আজকে যে লোকটাকে থাকতে দেখছেন, তাকে আপনি সাতদিন পরে সেখানে পাবেন কিনা নিশ্চিত না। হয়তো সে কড়াইলে কাজের সন্ধানে চলে যেতে পারে। শুধু কাওরানবাজার নয়, ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে এরকম “ভাসমান মানুষ” এর সংখ্যা অনেক! এদের তালিকা করার সময়ে এদের কোন এলাকার আওতাভুক্ত করা হবে, সেটা স্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে।

ছবি: নাহিয়ান বিন খালেদ

আজকের ঘোষণার আগেই কিছু জেলায় তালিকা বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিন্তু এতে পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে। বলা হয়েছে, ওএমএস বা খোলা বাজারের ১০ টাকা মূল্যের চাল ক্রয়ের সময় এনআইডি দেখাতে হবে। একই পরিবারের তিন-চারজন প্রাপ্তবয়স্ক যদি এনআইডি কার্ড দেখায়, তাহলে কি তারা সবাই চাল পাবে? একই পরিবারের সদস্যদের চিহ্নিত করার পদ্ধতি কী? মনে রাখতে হবে, এই অভাবের সময়ে ধনীরা যেরকম খাদ্য মজুদ করছে, সামনের কয়মাসের অনিশ্চয়তার শংকায় দরিদ্ররাও সে কাজ করতে পারেন। তাই পরিবারভিত্তিক ভাবে বরাদ্দ নিশ্চিত করা একটা বড় চিন্তার বিষয়!

আরও আছে ছিন্নমূল পথশিশু, প্রতিবন্ধি, রাস্তায়-ফুটপাথে বসবাসরত ভাসমান গোষ্ঠী। এদের অনেকের এনআইডি নেই। এরা কিভাবে খাদ্য পাবে? নগর পর্যায়ে দরিদ্রদের জন্য ব্যাপক আকারের সামাজিক সরকারি কর্মসূচি না থাকায় তাদের তালিকা বানানো হয়নি কখনো। অথচ এটা হওয়ার কথা অনেক আগেই।

মনে রাখতে হবে, এই তালিকার মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উপযোগিতা রয়েছে। কয়েকমাস ধরে একই দরিদ্র পরিবারকে খাবার এবং অর্থ সরবরাহ করতে হবে। তাই তালিকায় সুবিধাভোগী ট্রেসিং বা চিহ্নিত করতে তাদের এনআইডি নম্বর, ফোন নম্বর (যদি থাকে) সংগ্রহ করা প্রয়োজন বা কোন সাময়িক কার্ড প্রদান করা প্রয়োজন। এই ধরণের কর্মসূচিতে তিন ধরণের সমস্যা হয়-

১) যারা পাচ্ছে, তারা পাওয়ার কথা না (Inclusion error)

২) যারা পাওয়ার কথা, তারা পাচ্ছে না (Exclusion error)

৩) তছরুপ বা লুট করা (Leakage)

এই মুহুর্তে আমরা ৫-৬% Inclusion error হয়তো সহ্য করতে পারি। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে এই চরম খাদ্যাভাবের সময়ে Exclusion error এর ফলাফল হবে ভয়ংকর! বেড়ে যেতে পারে আরও কিছু Avoidable death এর সংখ্যা!

সাথে হরিলুটের সংস্কৃতি তো আছেই। গ্রাম পর্যায়ে প্রতিদিনই চাল চোরদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শহর পর্যায়ের এই বিশেষ কর্মসূচি মাত্র শুরু হল। তাই হয়তো এখনও তেমন খবর আসেনি। এই মুহূর্তে চাল চোরদের অপরাধটা একজন খুনির অপরাধের কাছাকাছিই! তাই নির্দেশনা দেখে আশাবাদী হতে পারেন। তবে বাস্তবায়ন পর্যন্ত যেতে আমাদের বেশ কিছু বাধা পেরোতে হবে।

Nahian Bin Khaled
Nahian Bin Khaled
Research and Policy Enthusiast

My research interests include political economy, public policy, education, social safety net, and program evaluation.

Related