৫০০ টাকার দুর্নীতিতে হাজার কোটির বিপর্যয়!
বিগত কয়েকদিনের খবরে দেখা যাচ্ছে, পাসপোর্টের ঠিকানা ভুয়া হওয়ায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিদেশ-ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের। সেটা ঘটছে প্রবাসী-বাঙালিদের দ্বারা বাহিত এই করোনা বিপর্যয়ের সময়ে।
শরীয়তপুর, মাদারিপুর, বরিশাল আর উত্তরবঙ্গের এলাকাগুলোতেই ঘটছে এই ঘটনা। হয়তো অনেকেরই জানা আছে, এই স্থানগুলো বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র। পাসপোর্টে ঠিকানা দেয়া আছে অথচ স্থানীয় প্রশাসন আর পুলিশের বাহিনী মিলে খুঁজে বের করতে পারছে না এদের। কিন্তু কেন খুঁজে পাওয়া যাবে না পাসপোর্টের ঠিকানায়? কারণ, খুচরা দুর্নীতি।
প্রথমত, একটা দুর্নীতিবাজ সাব-ইন্সপেক্টর গোষ্ঠীর ৫০০-১০০০ টাকার খুচরা ঘুষ। পাসপোর্টে ঠিকানা যা-ই দেন না কেন, এই কয়টা টাকা দিলে আপনার ভেরিফিকেশন হয়ে যাবে সহজেই। পাসপোর্ট আবেদনকারীর ঠিকানায় না গিয়ে অনেক এসআই থানায় নিয়ে আসেন আবেদনকারীকে। নিজে সেই ঠিকানায় গিয়ে ভেরিফাই করেন না। উপজেলা পর্যায়ে অনেক পাসপোর্টের ঠিকানা তো দালাল বা আদম ব্যবসায়ী নিজে ঠিক করে দেয়। আজকে যাদের পাসপোর্টের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের একটা বড় অংশ এই দালালের হাতে পাসপোর্ট বানিয়েছিলো। বলাই বাহুল্য, দালালেরাও এই এসআইদের ঘুষের বিনিময়ে হাত করে রাখে।ভেরিফিকেশনের কাজে নিয়োজিত অল্প কিছু এসআই ছাড়া বেশিরভাগই এই দুর্নীতিতে নিয়োজিত।
এই “উন্নয়নের দেশে” ৫০০টাকা-১০০০ টাকা কোন ব্যাপারই না। এই “অল্প কয়টা টাকা"র ঘুষের জন্য দেশের কোটি কোটি মানুষ আজ বিপাকে পড়েছে। এখন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে প্রশাসন এদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিলেও সেটা সফল করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, অনেকে পাসপোর্টে নিজের ঠিকানা আপডেট করাতে চাইলেও প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেটা রীতিমত নতুন একটা পাসপোর্ট করানোর সমান ভোগান্তি। এই কারণে এই দেশের নাগরিকদের একটা বড় অংশ পাসপোর্ট আর এনআইডি'র ঠিকানা আপডেট করানোর ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অবশ্য পার করে ফেলা যায় যদি এখানেও হাজারখানেক টাকা ঘুষ দেন।
তৃতীয় কারণটা নাগরিকের সাথে সংশ্লিষ্ট। হ্যাঁ, নাগরিকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে আমার অভিজ্ঞতায়, উপজেলা পর্যায়ের কমিউনিটি আইডেন্টিফিকেশন অনেক শক্তিশালী। পাড়া-প্রতিবেশি, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমেই অনেক কে খুঁজে পাওয়ার কথা৷ তাই উপরের দুইটি কারণকেই বেশি যৌক্তিক মনে হয়।
নাগরিকের নাম-ঠিকানা-পেশার তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা যে কত জরুরি, এত বড় ধাক্কার পরেও এই দেশ সেটা বুঝবে কিনা, সন্দেহ আছে। সমস্যা স্বীকার করার সংস্কৃতি তো দেশের উচ্চপর্যায়েও নাই।
এখন হাজার কোটির নিচের দুর্নীতি আর ব্যাংক ডাকাতি নিউজে জায়গা পায়না। অথচ দেখুন, খুচরা ৫০০-১০০০ টাকার দুর্নীতিও দেশের কোটি কোটি মানুষকে কিভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে! গোড়া থেকে এরকম কত গলদ হয়ে আছে এই দেশে, সেগুলো সমাধান না করলে একদিন বৃহৎ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে সেগুলোই।