লিওনার্দো দ্য ক্যাপ্রিও এখানে এসেছিলেন

ফাং নাগা আইল্যান্ডের এলাকার পাশেই ফুকেটের মূল এলাকা। ছোট বড় অনেকগুলা দ্বীপ নিয়ে এই ফুকেট। আন্দামান সাগরের উপর দিয়ে নৌকায় করে যেতে যেতে দেখছিলাম বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলা। ছবির এই পাহাড় গুলোকে ক্লিফ বলা হয়। আর এই ক্লিফ এলাকাটার পাশে একটা ছোট্ট বিচ।

নাম “মায়া বে” বিচ। লিওনার্দো দ্য ক্যাপ্রিও’র “দ্য বিচ(২০০০)” মুভির শ্যুটিং হয়েছিল এই বীচে। সেই থেকে এই বিচটাও হয়ে যায় বিশ্ববিখ্যাত। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসতেন। বিচে সময় কাটাতেন, স্নোরকেলিং করতেন আর স্কুবা করতেন। বিভিন্ন ট্যুরিস্ট এক্টিভিটির জন্য এই বিচকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছিলো কোটি কোটি টাকার পর্যটন ব্যবসা।

আর এইসব কাজের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার ফলাফলস্বরূপ এই বীচের প্রবাল প্রাচীর আর লাইমস্টোন ক্লিফগুলো ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছুদিন হল থাইল্যান্ডের সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য এই বীচে নামা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা বলছে, এই বীচের সব জায়গার প্রবাল আর ক্লিফের প্রাণ সম্পূর্ণ ফিরে পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

তাই এই বিচে নামতে দেওয়া হয়নি আমাদের। চারপাশ দিয়ে কয়েক মিনিটের একটা চক্কর মেরে চলে আসতে হল। সেখানে তাকিয়ে দেখলাম স্বচ্ছ সবুজাভ নীল পানি– যেগুলোর ভেতর দিয়ে ছোট বড় প্রবাল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, পানির উপর সবুজ দিয়ে ঘেরা লাইমস্টোন ক্লিফ আর সাগরের হাওয়া এই জায়গাটাকে অদ্ভুত বিস্ময়-জাগানিয়া মায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে।

এই ক্লিফগুলো দেখতে অনেকটা একরকম হলেও প্রতিটা দ্বীপের আলাদা কিছু সৌন্দর্য আর বৈশিষ্ট্যও আছে। এগুলোকে আরও আলাদা করার জন্য ফুকেটের পর্যটন ব্যবসায়ীরা মোটামুটি প্রতিটিতে আলাদা আলাদা এক্টিভিটি রেখেছেন। তাদের বোটগুলো কোথাও শুধু বিখ্যাত মুভির শ্যুট হয়েছিল বলে মানুষকে সেটা দেখতে নিয়ে আসছে (মায়া বে বিচ, জেমস বন্ড আইল্যান্ড) কোথাও স্নোরকেলিং করাচ্ছে। কোথাও স্কুবা। কোথাও ক্যানুয়িং করায়ে দ্বীপের পুরানো গুহা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে (হং আইল্যান্ড)। কোথাও শুধু বাঁদরের আস্তানা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে (মাংকি বিচ)। সাথে তুলনামূলক চড়া দামের খাওয়াদাওয়ার রমরমা ব্যবসা চলছে একটু বড় বিচওয়ালা আইল্যান্ডগুলোতে। শুধু প্রকৃতির অস্বাভাবিক সৌন্দর্য পেয়ে থাইল্যান্ডের পর্যটন ইকোসিস্টেম বসে থাকেনি। ব্যবসাটাও এরা দুর্দান্ত বুঝে। ভালো পরিমাণের টাকা ছাড়া কিচ্ছু হয় না এইসব পর্যটন এলাকায়। সরকারও কেন এখানের বাজারটা একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করে না, কে জানে! যে পানির বোতলের দাম সাধারণ বাজারে ৭ থাই বাথ (১৭-১৮ বাংলাদেশি টাকা), সেটা পর্যটন এলাকায় ৪০-৫০ থাই বাথে (১০০ বাংলাদেশি টাকা) বিক্রি হচ্ছে।

অন্যসব সার্ভিস প্রোডাক্টের ব্যবসাটাও দুর্দান্ত। এরা একেকটা সার্ভিস প্রোডাক্টের সাথে ২-৩টা অতিরিক্ত প্রোডাক্ট কিনিয়ে ছাড়বে আপনাকে, কাজে লাগুক আর না লাগুক। এক স্কুবা আর স্নোরকেলিং করানোর আগে আগডুম বাগডুম বলে কত কিছু যে কিনিয়ে নিলো! থাই ইংলিশে কথা বলা লোকাল ট্যুরিস্ট গাইড সেগুলো কেনানোর জন্য ফুসলাতে থাকে।

যদি না জানেন যে কোনটা লাগছে আর কোনটা লাগছে না, তাহলে তাদের কথা শুনেই কিনে ফেলতে হবে। আর গাইডদের টিপ্সের বায়না তো আছেই।

অবশ্য দিনশেষে প্রকৃতির অসীম সৌন্দর্য দেখে সবাই খুশি থাকে। যেহেতু ঘুরতেই যায়, সবাই হয়তো টাকা পয়সার মায়া কিছুটা কমায়েই দেওয়ার চিন্তা করে। তবে হিসেবি ট্রাভেলারও কম নেই একেবারে।

আমি একা একা গিয়েছিলাম। যতটুকু শখ পূরণ করা যায়, ততটুকু মিটিয়ে একটু হিসেব করেই চলেছিলাম।

Nahian Bin Khaled
Nahian Bin Khaled
Research and Policy Enthusiast

My research interests include political economy, public policy, education, social safety net, and program evaluation.

Related