বঙ্গবন্ধু আর রাষ্ট্রের অর্থে শিক্ষার বিনিময়
“আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, পড়ে পাস করেছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে পাস করেছি। আমাদের এবং আজ যাঁরা লেখাপড়া শিখছেন, তাদের লেখাপড়ার খরচ দেয় কে? আমাদের বাপ-দাদা নয়, দেয় বাংলার দুখী জনগণ। কিন্তু আমরা তাদের কি ফেরত দিয়েছি? তাদের আমরা রিপে করেছি কতটুকু?… করাপশন আমার বাংলার কৃষক করে না, করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা- শিক্ষিত সমাজ, যারা তাদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি।”
মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির প্রতি সরাসরি এই প্রশ্ন রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিবেকে চপেটাঘাত করা এই কথা শোনার জন্য কোন দলের সমর্থক হওয়ার প্রয়োজন নেই।
সত্যি কথা বলতে, উন্নয়নশীল দেশে এত বেশি অনার্স-মাস্টার্স করা মানুষের দরকার নেই। দরকার উদ্যমী আর দক্ষ জনবল। দেশের জন্য কিছু করা দরকার- এমন চিন্তাভাবনার প্রয়োজন।
২০১৮ সালের সংসদে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থী ৫ লাখ ২০ হাজার ৩৮৮ জন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে আরও। ইউজিসির হিসেব অনুযায়ী, প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে গড়ে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এই টাকা কোত্থেকে আসে?
আমার মতন অনেকে আছে, যারা এর থেকেও বেশি ঋণী। আমাদের অনেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়- সবই সরকারি প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত সস্তায় পড়ে ফেলেছি। তবে তার মানে এই না যে, শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২০-২৫ টাকা বেতন দিয়েই একেকটা স্কুল কলেজ চলে। অন্তত সমমানের প্রাইভেট স্কুলগুলোর খরচ দেখলেই সেটা বুঝা যায়। স্কুল কলেজ চালানোর এই বাড়তি টাকা কোত্থেকে আসে?
বাংলাদেশের যে অল্প কয়জন মানুষ কর দেয়, তাদের টাকা থেকে আসে এই বিপুল খরচ। শিক্ষার্থীদের দিক থেকে তাই দায়বদ্ধতাটা হৃদয় দিয়ে অনুভব না করলে বোঝা যাবে না যে, এই মানুষগুলোর দেওয়া করের বিনিময়ে দায়িত্বের সাথে কাজ করা কতটা জরুরি।
স্পষ্ট করে বলি, সারাক্ষণ পড়ালেখা করা জরুরি না। এটা সম্ভব না। কিন্তু দেশের মানুষের টাকায় পড়ার বিনিময়ে অন্তত কিছুটা অর্থবহ কাজ করা জরুরি। নিছক সময় নষ্ট করার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লাম- কারণ,এখানে বেশিদিন পড়লেও খরচ কম- এটা ভাবার কোন মানে নেই। এটা রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। হ্যাঁ, দেশে তবু শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে, শিক্ষার বাজেট এত কম কেন, সেই নিয়েও অনেক আলোচনা আছে। সিস্টেমের দায়বদ্ধতা নিয়ে বহু কথা বলার আছে। প্রশ্ন আছে করের টাকার ব্যবহারের ধরণ নিয়েও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর অবকাঠামোগত বহু সমস্যা আছে। সে আলোচনা হবে অন্য কোনদিন।
অন্তত আমি-আপনি নিজেদের দিক থেকে ঠিক থাকছি তো?